নিজস্ব প্রতিবেদক:
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে যা ছিলঃ
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আজ ১২ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে চেতনা বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, জামায়াত- শিবির, যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যদের সুকৌশলে অনুপ্রবেশ ও প্রভাব বিস্তার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যঃ
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা :
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ডাকে সাড়া দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত আপামর জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতায় দেশকে স্বাধীন করেছেন। দেশবাসী জানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, জামাত ও যুদ্ধাপরাধী বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল। যার প্রমাণ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তাদের ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করা, জামায়াত ই ইসলামের নিবন্ধন বাতিল, সকল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কঠোর হাতে দমন করে বাংলাদেশকে একটা স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধর চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল যা আমরা দেশবাসী আজ ভোগ করছি। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের অধিকাংশ সময় ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, ২১আগষ্ট গ্রেনেড হামলা সহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে হত্যা- নির্যাতনের মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতিকে পেছনের দিকে চালিয়ে দেশকে একটি অস্থিতিশীল, ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর অপকৌশল আপনারা দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সেসব অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে এনে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালিত হলে এবং এদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এমনটি স্মরণ করে কাজ করলে বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা হবে এটা আমরা শতভাগ নিশ্চিত। সেই বিশ্বাস ও আস্থার মূল ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রবীণ রাজনৈতিক দলটি একপর্যায়ে আসতে অনেক ত্যাগী ও বর্ষীয়ান নেতা - কর্মীদের হারিয়েছে তবুও কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি, পথহারা হয়নি, কর্মী সংকট ও হয়নি শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত বলে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণঃ
আপনারা জানেন, বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং দুটি ধারায় বিভক্ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রধান শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশ আর বিপক্ষ শক্তি হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবির, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের আশ্রয়- প্রশ্রয়দানকারী বিএনপি সহ অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী । ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত সহ সরকারি - আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সকল প্রাতিষ্ঠানে চাকুরীতে আসীন হয়ে অদ্যবধি প্রশাসনে আষ্টেপিষ্টে বসেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষ শক্তিকে বিণাশ করতে নানাবিধ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদ সমূহে আসীন হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। যার জলন্ত উদাহরণ, বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বৈষম্য হীন ভাবে বাংলাদেশকে একইসূত্রে গেঁথে বিনির্মাণের জন্য সরকারি চাকুরীতে কোটা ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ধ্বংস করে স্বাধীনতা বিরোধীরা বিভিন্ন উপায়ে যেমন- পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র ফাঁস, ডিভাইস কেলেঙ্কারি, প্রক্সি, প্যাকেজ ডিলিংস (টাকার বিনিময়ে), আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে চাকুরীতে প্রবেশ করিয়ে প্রশাসনে স্বাধীনতা বিরোধীদের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টায় তারা সফল হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের মূল তার্গেট প্রশাসনকে তাদের হস্তগত করে রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঢুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাসীদের কোণঠাসা করে দলকে তাদের হাতের মুঠোয় আনা। তাদের প্রধান টার্গেট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন সমূহ।এক্ষেত্রে তারা তাদের টার্গেটে পৌঁছাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং ইতোমধ্যে প্রশাসনের বিশাল অংশ তারা দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে।
হে জাতির বিবেকগণঃ
আপনারা জানেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা । পাশাপাশি তিনি ধারাবাহিক ভাবে ০৩ বার সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছন। দলের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই সভাপতি হিসেবে তিনি বারবার বক্তব্যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, অনুপ্রবেশ কারীদের দল থেকে বের করে দিয়ে প্রকৃত নেতা - কর্মীদের দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে। মাননীয় সভাপতির বক্তব্যে স্পষ্ট যে, দলে চেতনা ও আদর্শ বিরোধী গোষ্ঠী প্রবেশ করেছে আর তাই তিনি প্রকৃত দলের ত্যাগী লোকদের হাতেই দলের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন। আমরা জননেত্রীর এই চিন্তা - চেতনার সাথে একমত পোষণ করছি। গত ০১লা জুলাই দলের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন যা আমাদের চেতনা বোধের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল বিধায় আমরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা গত ০৪ঠা জুলাই ২০১৯, প্রতিবাদলিপী পেশ করেছি। যদিও পরবর্তীতে দলের সাধারণ সম্পাদক তিনি তাঁর বক্তব্যে "দলীয় গনতন্ত্র অনুসরণ করে সাধারণ সদস্য নেওয়া হবে, কোন যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যদের নেওয়া হবে না" মর্মে বক্তব্য পরিষ্কার করেছেন। এজন্যে জনাব ওবায়দুল কাদের কে ধন্যবাদ জানাই এবং অতীতে যে বা যারা দলে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের বহিষ্কারের বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনার দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করছি। এক্ষেত্রে তথ্য - উপাত্ত দিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।
আজকের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নিকট আমাদের দাবী সমূহঃ
১) সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, জামায়াত- শিবির, যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তান যাদেরকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন সংগঠন সমূহের বিভিন্ন পর্যায়ে পদায়ন করে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ সহ অনতিবিলম্বে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
২) যেসকল জনপ্রতিনিধি যথা - জাতীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ এর গঠনতন্ত ও মুজিব আদর্শের বিরোধী পরিবারের সদস্য হয়েও তথ্য গোপন করে নানা উপায়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ এর গঠনতন্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
৩)সারা দেশব্যাপী দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী সকল কাজকর্মে অনুপ্রবেশ কারীদের ভূমিকা দৃশ্যমান। এই চক্র আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্য ও দলের নিবেদিত নেতা - কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়ি ঘর ভাংচুর, জমি দখল, সম্পদ লুট ও মিথ্যা মামলা দেওয়া সহ নির্যাতন স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অনতিবিলম্বে জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক " বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সুরক্ষা আইন পাশ করা হোক এবং এযাবৎকালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উপর সকল হত্যা, অত্যাচার ও নির্যাতনের দ্রুত আইনের মাধ্যমে বিচার চাই ।
৪) যুদ্ধাপরাধী - মানবতাবীরোধীদের সন্তান ও তাদের সন্তানদের সন্তান অর্থাৎ নাতি নাতনিদের সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে অযোগ্য ঘোষণা সহ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধের গনিমতের মাল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে সুষ্ঠ বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে স্বপরিবারে হত্যার পর থেকে অদ্যবধি স্বাধীনতা বিরোধী চক্র সরকারের সকল পর্যায়ে বৈষম্য মূলক নিয়োগের মাধ্যমে যত পদে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করতে আনুপাতিক হারে সম পদ সৃষ্টি করে সেগুলো কোটার মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।
৬) বাংলাদেশ আওয়ামী ও তার সকল ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পদসমূহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে পদায়ন করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সূখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ এ অনুপ্রবেশ ঠেকান এবং উল্লেখিত দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে দলকে বাঁচান। অন্যথায় পুনরায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জামাত-শিবির, রাজাকার ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য যে বা যারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ এবং তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন সমূহে বিভিন্ন পদে আসীন আছে তাদের নাম, ঠিকানা ও পদবী সহ তালিকা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু , বাংলাদেশ চিরজীবী হোকঃ
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব মেহেদী হাসান ।
উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক - মোঃ সেলিম রেজা, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক - শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদ (বিপিএস) সভাপতি - এ.এন.এম ওয়ালীউর রহমান মোল্লা, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড সভাপতি - জাফর ইকবাল নান্টু, প্রজন্ম ৭১ এর সদস্য - অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় জাতীয় কমিটির জনাব গোলাম রহমান লিখন, মামুন তালুকদার, খন্দকার সাজ্জাদ হোসেন ময়না, মোঃ হুসাইন রাসেল, মোঃ রবিউল ইসলাম, শিপন, আলম, মাসুদ, জাহাঙ্গীর সহ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর-জেলা, আয়কর বিভাগ সহ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কমান্ড এর নেতৃবৃন্দ।