নিজস্ব প্রতিবেদক:
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ- পশ্চিম দিকে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ১১ ই মে’র মধ্যে গভীর নিম্নচাপ থেকে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । গতিপথ পরিবর্তন না হলে মোচা( Mocha) নামক ঘূর্ণিঝড়টি ১৬ ই মে’র মধ্যে সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে । যার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাগুলো ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে ।
ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার ।
আমেরিকা ও ইউরোপিয়ানসহ বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে এ তথ্য জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ।
সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি ।
আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক এই পিএইচডি গবেষক লেখেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোচা( Mocha) সৃষ্টি ও ১৩ থেকে ১৬ ই মে এর মধ্যে সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে । আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ৮ থেকে ৯ ই মে এর মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ- পশ্চিম দিকে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ১০ ই মে এর মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়া ও ১১ ই মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে । একই সঙ্গে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল প্রায় ৫০ থেকে ৬০ সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে ১০ ই মে আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ- পশ্চিম দিকে ঘূর্ণিঝড় মোচা( Mocha) সৃষ্টির ।
তিনি আরও লেখেন, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাষ অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মোচা( Mocha) ১৪ ই মে মধ্যরাতের পরে থেকে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে । আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে স্থলভাগে আঘাত করার সময় ঘূর্ণিঝড়টির খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে । সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মোচা( Mocha) স্থল ভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার ।
‘ আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ঘূর্ণিঝড় মোচা যে স্থানে( দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর) উৎপত্তি হওয়ার কথা নির্দেশ করছে ও যে পথে( উত্তর- পূর্ব দিকে) অগ্রসর হওয়ার কথা নির্দেশ করছে তাতে করে এই ঘূর্ণিঝড়টির কারণে সবচেয়ে বড় হুমকি হবে জলোচ্ছ্বাস । ’
এর কারণ হিসেবে কামাল জানান, ১৪ ই মে( চাঁদ এর ৮১ অন্ধকার থাকবে) সন্ধ্যার পর থেকে যদি ঘূর্ণিঝড়টি স্থাল ভাগে আঘাত হানা শুরু করে তবে কমপক্ষে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের চর ও উপকূলীয় এলাকাগুলো । ঘূর্ণিঝড়টির সৃষ্টি ও স্থাল ভাগে আঘাত করার সময় যদি মাত্রা তিন দিন পিছিয়ে১৭/১৮ তারিখ হয়ে তবে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের চর ও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে, কারণ ১৮ ই মে অমাবস্যার রাত ।
ঘূর্ণিঝড়কে সামনে রেখে উপকূলীয়বাসীর প্রতি কিছু নির্দেশনা ও অনুরোধ রেখেছেন মোস্তফা কামাল পলাশ ।
১) উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আগামীকাল থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা শুরু করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি ।
২) দেশের কৃষক ভাইদের সকল পাকা ধান মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে কেটে গোলায় তুলার অনুরোধ জানাচ্ছি ।
৩) উপকূলীয় এলাকার মৎসচাষিদের জলোচ্ছ্বাস থেকে মাছের ঘের রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি ।
৪) লবণ চাষিদের মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে সকল লবণ তুলে ফেলার অনুরোধ জানাচ্ছি ।
৫) জেলে ভাইদের অনুরোধ জানাচ্ছি ১০ তারিখের পরে নতুন করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে না যাওয়ার জন্য । গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের জেলেরা যেন অবশ্যই ১১ ই মে এর মধ্যে ও খুলনা বিভাগের জেলেরা অবশ্যই ১২ ই মে এর মধ্যে উপকূলে ফিরে । ১১ ই মে এর পরে যদি কোন জেলে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় তবে প্রাণ নিয়ে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম ।
৬) বন্যা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতি বিনীত অনুরোধ উপকূলীয় সকল বেড়িবাঁধের সকল ত্রুটি কিংবা দুর্বল স্থান গুলো মে মাসের ১২ তারিখের পূর্বেই মেরামত করার জন্য ।
মোস্তফা কামাল পলাশ দেশবাসীকে সতর্ক করে লেখেন, আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই পুরো এপ্রিল মাস উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে কোনো লঘু চাপ/ নিম্নচাপ/ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি । ফলে ব্যাপক পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রের পানিতে । ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোচা খুবই শক্তিশালী হবে এই বিষয়ে আমি হলফ করিয়া বলিতে পারি । মে মাসের ৩ তারিখের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ও মে মাসের ৫ তারিখের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ নিশ্চিত হওয়ার যাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোচা ঠিক কোন শক্তিতে উপকূলে আঘাত হনতে পারে । তবে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে এই ঘূর্ণিঝড় সরাসরি বাংলাদেশের উপকূল দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করতে যাচ্ছে ।
আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক এই পিএইচডি গবেষক দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে পূর্বাভাস জানিয়ে আসছেন । পূর্বাভাসগুলো মিলে যাওয়ার কারণে ফেসবুকে তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে ।
প্রজন্মের কন্ঠস্বর/০১ মে /এসএমএ