নিজস্ব প্রতিবেদক:
দয়াময় আল্লাহই চিরন্তন সত্য। সবই তাঁর ইচ্ছার ফসল, তিনিই চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, সৃষ্টিকুলের অধিশ্বর। তাঁর অন্তহীন রূপ ও গুণের প্রকাশ এবং বিচ্ছুরণ তাঁর হাবিব দয়াল রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। তিনি আসবেন বলেই ত্রিভূবন এত সুন্দর ও মনোরম, সর্বত্র এত আয়োজন। সমগ্র সৃষ্টি এ আয়োজনের অংশ মাত্র। দয়াময় আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের ফসল মানুষ, মহান আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের গুণাবলি নিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। দয়াময় অল্লাহ্ই যে মহাসত্য, এ দর্শন জগতের বুকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ্ তায়ালা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবি-রাসুল এবং যুগের ইমাম, মুজাদ্দেদ, অলী-আল্লাহগণকে মোর্শেদ রূপে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা সকলেই দার্শনিক। দর্শনে মানুষ, জগৎ, জীবন, জ্ঞানের প্রক্রিয়া আলোচিত হয়। দর্শন মানেই আদি জ্ঞান, সত্যানুসন্ধান, পরম সত্তার উপলব্ধি। সত্যানুসন্ধানী ব্যাক্তি মাত্রই দার্শনিক। দর্শনে পরম সত্তার সন্ধান করা হয়। যিনি পরম স্রষ্টার রূপ-স্বরূপ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তাঁর দর্শনেই জগৎ অলোয় উদ্ভাসিত হয়, মানুষ মুক্তির পথনির্দেশনা পায়। আদর্শ হলো বাস্তবতার জ্ঞানীয় ধারণা; যা মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ধারণা, মিথ, দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। দর্শনিক চিন্তাধারা থেকেই এর সৃষ্টি এবং তা দ্বারা জগৎ প্রভাবিত হয়। আদর্শের সাথে যে বিষয়টি প্রথমে চলে আসে, তা হলো অনুশীলণ বা চর্চা। দর্শনই আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজে চর্চা হয়। যুগে যুগে মহামানবগণের সংস্কারমূলক দর্শন আলোকবর্তিকা হয়ে জগদবাসীকে সত্যের সন্ধান দেয়।
দয়াল রাসুল (সা.)-এর আগমনের প্রায় ১৪০০ বছর পর জগতের বুকে আগমন করেন বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান। তিনি ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কারগুলো মানবজাতির নিকট উপস্থাপন করে এর সংস্কার সাধন করছেন। সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্য তিনি জগদবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর অনেক সংস্কারমূলক দর্শন আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জগতশ্রেষ্ঠ এ মহামানব ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর ২৩তম অধঃস্তন মহামানব। তিনি ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রহমতের সময় মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে জমানার ‘মোজাদ্দেদ’ বা সংস্কারকের দায়িত্ব পান; ১৯৮৮ সালের ১০ মহররম আশুরার দিবসে যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন; পরবর্তীতে বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) তাঁকে ১৯৮৯ সালের ৫ এপ্রিল রহমতের সময় ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে বিভূষিত করেন; ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর সমস্ত নবি-রাসুলের বেলায়েত ও তাঁদের ধর্ম পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর, শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে আল্লাহ্ তাঁকে স্বরূপে প্রকাশ করেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজও তাঁর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি পূর্ণিমার চাঁদে দেখতে পাচ্ছেন।
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান এমনি এক মহামানব, যার দর্শন (Philosophy) মানুষকে মুক্তির পথে আহ্বান করে। মানুষ কিভাবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারে, আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে সেই পদ্ধতি তিনি শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক দর্শন থেকে কয়েকটি আলোচনা করা হলো।
সূফী সম্রাটের অনন্য দর্শন, মহান আল্লাহ্ নিরাকার নন; তাঁর অপরূপ সুন্দর নুরের সুরত আছে। সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা হচ্ছে- বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন নিরাকার! তাঁকে জীবদ্দশায় দেখা সম্ভব নয়; আল্লাহর আকার আছে, তা বিশ্বাস করলে মানুষ ইমানহারা হয়ে যাবে। এই ভ্রান্ত ধারণার উপর বিশ্বাস করে মুসলমানগণ সরল মনে নিরাকার ও অদৃশ্য আল্লাহর ইবাদত করছে। অথচ আমরা ভাবি না, আল্লাহ নিরাকার হলে মানুষ কার ইবাদত করে? দয়াল রাসুল (সা.) মিরাজে গিয়ে আল্লাহ দর্শন লাভ করেছেন, তাঁর সাথে কথা বলেছেন, এখানে কি নিরাকার আল্লাহর কথা বলা হয়েছে? আমরা জানি হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহ কুরসিতে সমাসীন হয়ে আমাদের বিচার করবেন, আল্লাহ্ যদি নিরাকার হন, কুরসি মোবারকে বসবেন কিভাবে? মৃত্যুর সময় ইমানি পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়-‘তোমার প্রভু কে?’ সমস্ত জীবন ইবাদত-বন্দেগি করে যদি প্রভুর পরিচয় না পাই- তাহলে কী উত্তর দিবো? আমরা বলি ‘আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়’; নিরাকার কোনো কিছুকেই এক, দুই, তিন ইত্যাদি সংখ্যা বাচক শব্দ দ্বারা গণনা করা যায় না। আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। যাঁর অস্তিত্ব নেই, নিরাকার; তাঁর গুণ প্রকাশ পাবে কিভাবে? এটি প্রকাশ্যে দ্বৈত মতবাদ। হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ হযরত আদম (আ.)-কে তাঁর নিজের সুরতে সৃষ্টি করেছেন।” (বোখারী ও মুসলিমের সূত্রে মেশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা ৩৯৭)। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দর্শন- স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তাঁকে নিরাকার মনে করে, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন মূল্যহীন। স্রষ্টার অস্তিত্ব ও স্বরূপ সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্পষ্ট হতে হবে। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী দীর্ঘ ৩৩ বছর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে বিষয় সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মারফু হাদিসের আলোকে আল্লাহর জাত-পাক ও ৯৯টি সিফাত অর্থাৎ গুণবাচক নামের পরিচয় উপস্থাপন করে প্রায় ১১ হাজার পৃষ্ঠা সংবলিত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক ৮ খন্ডের যে তাফসীর শরীফ প্রণয়ন করেন, তাই সূফী সম্রাটের মানব মুক্তির দর্শন (Philosophy)। এটি পৃথিবীর একমাত্র তাফসীর শরীফ যেখানে আল্লাহর বাণী দিয়েই, আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) গরিব ছিলেন না; তিনি ছিলেন ধনী ও মদীনার শাসনকর্তা। সমাজে প্রচার হয়েছে রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন; ৭০ তালিওয়ালা কাপড় পড়তেন; খাবার পেতেন না, ক্ষুধার জন্য পেটে পাথর বাঁধতেন; ইহুদির খেজুরের বাগানে পানি উঠাতেন এবং এক বালতির বিনিময়ে তিনি ২টি করে খেজুর পেতেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাঁর প্রজ্ঞাময় যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে প্রচলিত প্রতিটি ভ্রান্ত মতের অবসান করেছেন। হযরত রাসুলে আকরাম (সা.) আরবের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ও প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী কোরায়েশ বংশের হাশেমি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। রাসুল (সা.) পিতৃকুল ও মাতৃকুল- এ উভয় দিক থেকে আরবের সবচেয়ে ধনী, সম্মানীত ও শ্রেষ্ঠ পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ্ (আ.) ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। রাসুল (সা.) আরবের শ্রেষ্ঠ পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে, অতি সম্মানজনক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষা এবং সদাচরণের জন্য খ্যাত তায়েফের উপকন্ঠে হুনায়েন সংলগ্ন মরু প্রান্তরের অত্যন্ত কুলীন বংশের বনু সা’দ গোত্রের বিবি হালিমা (রা.)-এর কাছে প্রতিপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আরবের সম্পদশালী লোকেরা তাঁর নিকট নিজেদের মূল্যবান সম্পদ গচ্ছিত রাখতেন এবং সবাই তাঁকে আলামিন বলে ডাকতেন। কোনো গরিব লোকের কাছে কি কেউ আমানত রাখে? বিবাহের পর আরবের সেরা ধণাঢ্য রমণী হযরত খাদিজা (রা.) নিজের যাবতীয় সম্পত্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে উৎসর্গ করে দেন। পঁচিশ বছর বয়সেই হযরত রাসুল (সা.) আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী। হিজরতের পর তিনি নবগঠিত মদীনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন। এ সময় কাফেরদের সাথে যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যুদ্ধের সমস্ত ব্যয় তিনি নিজে নির্বাহ করেন। যুদ্ধে যে বিপুল পরিমাণে গনিমতের মাল লাভ হতো, তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ্ তায়ালা রাসুলের (সা.)-এর জন্য হালাল ঘোষণা করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে জাকাত প্রদানের নির্দেশ দেন। দয়াল রাসুল (সা.)-এর সাহচর্যে সার্বক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ আহলে সুফ্ফা অবস্থান করতেন, তিনি সবার খাবারের ব্যাবস্থা করতেন। যদি নিজে না খেয়ে ক্ষুধার তাড়নায় পেটে পাথর বাঁধতেন, তবে এতো লোকের খাবারের ব্যাবস্থা করতেন কিভাবে? রাসুল (সা.)-এর ব্যবহার্য জিনিসপত্র, সুশোভিত অট্টালিকায় তাঁর জন্ম হওয়ার স্মৃতি প্রমাণ করে তিনি সত্যিই ধনী ছিলেন। বিদায় হজে তিনি একশটি উট কোরবানি দিয়েছিলেন। মূলত দয়াল রাসুল (সা.)-কে সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে মুসলমানদেরকে ছোটো করার জন্যই এ ধরনের প্রচারণা। সূফী সম্রাট প্রমাণ করেছেন, দয়াময় আল্লাহ যাঁর হাতে পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবি অর্পণ করেছেন, তিনি কখনো গরিব হতে পারেন না। আমরা গরিব রাসুলের উম্মত নই। সূফী সম্রাটের এ দর্শন উপস্থাপনের লক্ষ্যে ‘বিশ্বনবীর স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট: রাসুল (সা.) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?’ নামে কিতাব প্রণয়ন করেন।
সূফী সম্রাট পবিত্র কুরআন ও হাদিস দিয়ে প্রমাণ করেছেন- পবিত্র আশুরার দিবসে আল্লাহ্ তায়ালা আরশে সমাসীন হয়েছিলেন, যে কারণে দয়াময় আল্লাহর অভিষেক উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এদিনে অপরিসীম রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “হে রাসুল (সা.)! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করলেন এবং তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিলেন তাদেরই সম্বন্ধে এবং বললেন- আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল-হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী রইলাম।” (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : আয়াত ১৭২)। সেদিন আরশে সমাসীন হওয়ার মধ্য দিয়ে যে আভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে সকল আদম সন্তানের রূহসমূহ মহান আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করে নেয়। (তাফসিরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৯৫) সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলা বিশ্ববাসীকে প্রমাণ করে দিলেন, সেই দিবসটি ছিল, মহান রাব্বুল আলামিনের আরশে সমাসীন হওয়ার দিবস- মহরমের দশ তারিখ । আশুরার এ দিনটির মহিমা অসীম। আশুরার দিনে আল্লাহ্ তায়ালা সৃষ্টিকর্তা ও প্রভু হিসেবে সমগ্র সৃষ্টির মাঝে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। এ দিনের সম্মানের খাতিরে অসংখ্য নবি, রাসুল ও মহামানবের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়েছে। তাই এ দিনটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নাম ইমান। যে হযরত রাসুল (সা.)-কে যতটুকু ভালোবাসে তার মধ্যে ততটুকু ইমান আছে।” দয়াময় আল্লাহ তাঁর সর্বোত্তম সৃষ্টি হযরত রাসুল পাক (সা.)-কে হিজরিপূর্ব ৫৩ সালের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবেহ সাদেকের সময় এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে আনন্দের দিন। হযরত রাসুল (সা.)-কে প্রেরণের আনন্দের আতিশয্যে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের নিয়ে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করেন এবং মানুষকেও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করে শ্রদ্ধার সাথে সালাম জানাতে নির্দেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ (সব সময়) দরূদ প্রেরণ করেন নবির প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতারাও। হে মু’মিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করো এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।”(সূরা আল আহযাব ৩৩ : আয়াত ৫৬)
‘ঈদ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে খুশি, আর ‘মিলাদুন্নবি (সা.)’ শব্দের অর্থ হচ্ছে হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্ম। ফলে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর অর্থ দাঁড়ায় রাসুল (সা.)-এর জন্মের খুশি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “(হে হাবিব) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১) অর্থৎ দয়াল রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসাই দয়াময় আল্লাহকে ভালোবাসা। দয়াল রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপন, হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সূফী সম্রাট এ শিক্ষাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন এবং তা করেছেন। তাঁর এ দর্শন আশেকে রাসুলদের হৃদয়ে অভূতপূর্ব প্রেমের সঞ্চার করেছে। বিশ্বময় রাসুল প্রেমের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সূফী সম্রাট বলেন, সৃষ্টির আদিমতম বিজ্ঞান তাসাউফ- আল্লাহ সম্পর্কে জানার বিজ্ঞান। দয়াময় আল্লাহ প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)-কে নিজে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এ জ্ঞানের বলেই হযরত আদম (আ.) ফেরেশেতাদের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন প্রমাণিত হলেন। মহান আল্লাহ্ যে পদ্ধতিতে হযরত আদম (আ.)-কে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাই তাসাউফ- পৃথিবীর আদিমতম স্বর্গীয় মৌলিক জ্ঞান। এ জ্ঞান অর্জন করেই হযরত আদম (আ.) হতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সমস্ত নবি-রাসুল আল্লাহর পরিচয় লাভ করে তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের কাছে তাওহিদের বাণী পৌছে দিয়েছেন। মানব জাতির জন্য প্রভুর পরিচয় জানা ও প্রভুর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা গুরুত্বপূর্ণ, তাসাউফ হলো আল্লাহকে জানার বিজ্ঞান। দয়াল রাসুল (সা.)-এর আবির্ভাবের সময় আরব সমাজ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিপতিত ছিল। কিন্তু রাসুল (সা.) তাসাউফের শিক্ষা দিয়ে তৎকালীন বর্বর আরবদেরকে একটি আদর্শ জাতিতে পরিণত করেছিলেন। সেখান থেকে ইসলামি সভ্যতা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আজ ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ‘এলমে তাসাউফের শিক্ষা’ ছেড়ে দেওয়ার কারণে মুসলিম জাতি নিজেদের গৌরবময় ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ইসলাম থেকে যেদিন তাসাউফ বিলুপ্ত হয়েছে, সেদিন হতেই ইসলাম প্রাণহীন হয়ে গিয়েছে। ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি, এ শান্তিময় জীবন বিধানকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজন তাসাউফ চর্চা। সূফী সম্রাটের দর্শন হলো, মানুষ কিভাবে মেরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারে, কিভাবে ষড় রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করে, আত্মিক শুদ্ধতা লাভ করে আদর্শ চরিত্র অর্জন করার কৌশল সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারে।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের শান্তি ও সম্প্রীতির দর্শন মানবজাতির জন্য এক নবযুগের সূচনা করেছে। তাঁর সংস্পর্শে আসলে বুঝা যায়- ইসলাম শান্তির ধর্ম, দয়াল রাসুল (সা.)-এর দিদার নসিব হয়, মানুষ চরিত্রবান হয়ে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মুক্তিকামী মানুষ তাঁর সংস্পর্শে এসে নিজ নিজ ধর্মে থেকেই মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছেন। বর্তমান যুগে শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “তিনিই রাহমান, তাঁর সম্বন্ধে যিনি অবগত আছেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখো।”(সূরা আল ফুরকান ২৫: আয়াত ৫৯)
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান এ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে তাঁর শিক্ষা পদ্ধতিকে যুগোপযোগী করেছেন। কোনো মানুষ তাঁর পবিত্র শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসলে তিনি তাকে প্রথমেই তওবা পড়িয়ে আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রথম সোপান লতিফায়ে ক্বালবে সবক দান করেন এবং আত্মার মুখে জ্বিকির জারি করে দেন। পাশাপাশি ইসলামি আহকামসমূহ পালনসহ কিছু নফল ইবাদতের আদেশ দেন। তাঁর চারটি শিক্ষা। ১। আত্মশুদ্ধি, ২। দিল জিন্দা, ৩। নামাযে হুজুরি ও ৪। আশোকে রাসুল হওয়া। এর মাধ্যমে মানুষ ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি রাসুলের (সা.)-এর চরিত্রে চরিত্রবান হয়। তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে মানুষ সুষ্ঠু সামাজিক জীবনের পাশাপাশি আত্মিক পরিশুদ্ধতা লাভ করে আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার গৌরব লাভ করতে পারেন।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের দর্শন আজ বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত। তাঁর অনেক দর্শন রাষ্ট্রিয়ভাবে দেশ ও বিদেশে গৃহীত হয়েছে। সূফী সম্রাটের সংস্পর্শে আসলে জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব হয়। তাঁর বাণী শ্রবণে হৃদয়ের অন্ধত্ব দূর হয়, পরম প্রশান্তিতে হৃদয় পুলকিত হয়ে উঠে। তাঁর দর্শন হৃদয়ে ধারণ করলে বুঝা যায় মহান আল্লাহ্ কত দয়াময় ও তাঁর সৃষ্টিরাজী কত সুন্দর। মুসলিম সমাজের প্রচলিত ধারণা ছিলো, এলমে তাসাউফের সাধনা করে সুফি হবার উদ্দেশ্যে মানুষকে সংসার ত্যাগী হতে হয়। সূফী সম্রাট রাজধানী ঢাকার বুকে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন- সমাজে অবস্থান করেই মানুষ আওলিয়ায়ে কেরামের নির্দেশ পালন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। তাঁর আদর্শ ও শিক্ষা গ্রহণ করে অসংখ্য মানুষ আশেকে রাসুল হয়ে, স্বপ্ন ও মোরাকাবায় দয়াল রাসুল (সা.)-এর দিদার পাচ্ছেন। বর্তমান পৃথিবীর এ চরম ক্রান্তিলগ্নে মুক্তি পেতে হলে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের দর্শন ও আদর্শ চর্চার কোনো বিকল্প নেই।