নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের ঘটনায় দুটি হত্যাসহ চারটি মামলা হলেও দোকান মালিক ও বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার ছাড়া দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই। হত্যা মামলা দুটির তদন্তভার পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ—(ডিবি)। এই চারটি মামলায় মোট আসামি ১ হাজার ৫৭৪ জন।
দুটি হত্যা ছাড়া অন্য দুটি মামলায় বিস্ফোরণ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাওপোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই দুটি মামলা করা হয়েছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। দুটি মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আর নিহত নাহিদ ও মুরসালিন হত্যা মামলায় ৩৫০ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার মকবুল হোসেনকে শনিবার তিনদিনের রিমান্ডে পেয়েছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। সংঘাতের ঘটনায় নিউমার্কেট থানা পুলিশের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“পুলিশের নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ জানান, মকবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে, আদালত তিন দিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। তার বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এই আসামির সঙ্গে আরও আসামিরা ছিল কি না, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।”
এছাড়া সংঘর্ষে হেলমেট পরে অংশ নেওয়ারা অধিকাংশই ছাত্র বলে ডিবি জানালেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, তারা প্রতিটি ভিডিও বিশ্লেষণ করছেন, শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে তারা কাউকে গ্রেপ্তার করবে না।
“গোয়েন্দা পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহী জানান, মোরসালিন হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব ডিবিকে দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিন নাহিদ হত্যার তদন্তভারও দেওয়া হয়। তারা হত্যা মামলা দুইটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে’তদন্ত করছে। হেলমেট পরে যারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তাদের অধিকাংশই ছাত্র বলে জানান এই কর্মকর্তা। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না বলেও জানান তিনি।”
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নিউমার্কেটে দোকান কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হওয়া দুই দোকান কর্মচারীর পরিবারের পক্ষ থেকে করা হত্যা মামলা দুইটি ডিবি তদন্ত করছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।’
“নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এর মধ্যে বিস্ফোরণ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাওপোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেওয়ার অভিযোগ দুটি মামলা করেছেন নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির। এই দুই মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে বাকি সব আসামি অজ্ঞাত নামা রাখা হয়েছে।”
এসআই মেহেদী হাসানের মামলায় আসামি ১৫০ থেকে ২০০ জন, পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবিরের মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা দোকান মালিক ও কর্মচারী ২০০ থেকে ৩০০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ৬০০ থেকে ৭০০ জনকে মামলা করেছে।
এই মামলার ১ নম্বর আসামি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন। আর মামলার ৫ নম্বর আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ও থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীকে। বাকি ২২ জন নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্র। তবে এঘটনায় এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
পুলিশের করা মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন- আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, মিজান ব্যাপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, হেহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।
এরআগে গত সোমবার রাত ১২টার দিকে দুই দোকানের মধ্যে বিরোধের ঘটনায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়লে দুই দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। দুই দিনের সংঘাতে আহত হন কমপক্ষে ৩০০ জন। প্রাণহানি হয় দুজনের। অন্তত ১৫ জন সংবাদকর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন।