হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করলেন বাবুনগরী

img

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা কথিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী।

 

রবিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় বাবুনগরী এই ঘোষণা দেন। পরে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েও এই তথ্য জানানো হয়।

ভিডিও বার্তায় বাবুনগরী বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফজাতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের পরামর্শক্রমে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। ইনশাআল্লাহ আগামীতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আবার হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম শুরু হবে।’ এ সময় তিনি হেফাজতে ইসলামকে এদেশের দ্বীন ও ঈমান রক্ষার সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেন।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারের তালিকায় আছেন সংগঠনটির আরও দুই শতাধিক নেতা। এমন প্রেক্ষাপটে প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা এলো।

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম প্রথমবারের মতো ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল সংগঠনটি ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে। তাদের এই শোডাউন ব্যাপক নজর কাড়ে বিভিন্ন মহলের। তবে এর ঠিক এক মাস পর ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে পালাতে বাধ্য হন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এরপর সংগঠনটি অনেকটা চুপসে যায়।

হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। পরবর্তী সময়ে দেশের শীর্ষ এই আলেমের সরকারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। তার নেতৃত্বেই কওমি মাদ্রাসা দাওরায়ে হাদিসের সনদের সরকারি স্বীকৃতি পায়। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধিও দেন আলেম-উলামারা।

আল্লামা শফী ইন্তেকাল করেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তার ইন্তেকালের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে হেফাজতের আমির নির্বাচিত হন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, যিনি আল্লামা শফীর কমিটির মহাসচিব ছিলেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আলেমরা প্রাধান্য পান। মূলত তাদের কারণে হেফাজত ধীরে ধীরে সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায় এবং মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে।

এছাড়া সম্প্রতি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর তার বিরুদ্ধে হেফাজত কোনো ব্যবস্থা নেবে এমনটা প্রত্যাশা ছিল সর্বমহলের। কিন্তু হেফাজত এই ইস্যুতে জরুরি বৈঠক করলেও দাবি করে সেখানে মামুনুল হক ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি। এছাড়া এটা মামুনুল হকের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বলেও মন্তব্য করেন বাবুনগরী। মূলত হেফাজতের এই অবস্থানই সংগঠনটিকে আরও চাপে ফেলে।